'বিভা এরকুল পোয়ারো' সিরিজের চতুর্থ খণ্ডে আমাদের এবারের পেশকশ আগাথা ক্রিস্টির লেখা চতুর্থ তথা গোয়েন্দা এরকুল পোয়ারোকে নিয়ে লেখা তৃতীয় উপন্যাস- 'দ্য মার্ডার অব রজার অ্যাকরয়েড।'
১৯২৫ সালের ১৬ই জুলাই ‘লন্ডন ইভনিং নিউজ’ পত্রিকায় ‘হু কিলড্ অ্যাকরয়েড’ নামক একটি উপন্যাসের প্রথম কিস্তি বেরোল। সেই বছরেরই ১৬ই সেপ্টেম্বর অবধি, মোট ৫৪টি পর্বে প্রকাশিত হল এই উপন্যাস। ১৯২৬ সালের জুন মাসে পুরো লেখাটা গ্রন্থাকারে যুক্তরাজ্যে ‘উইলিয়াম কলিন্স, সনস্’ থেকে এবং যুক্তরাষ্ট্রে ‘ডড্, মিড্, অ্যান্ড কোম্পানি’ থেকে “দ্য মার্ডার অফ রজার অ্যাকরয়েড” নামে আত্মপ্রকাশ করল।
বাকিটা ইতিহাস!
হ্যাঁ, অন্তত এই উপন্যাসের ক্ষেত্রে উপরোক্ত বাক্যটি বিন্দুমাত্র অতিশয়োক্তি নয়। অগণন পাঠক, সমালোচক, এমনকি প্রতিদ্বন্দ্বী একবাক্যে মেনে নিয়েছেন, এই উপন্যাসের তুলনা নেই। সমকালীন ‘টাইমস্ লিটার্যারি সাপ্লিমেন্ট’ ও ‘’নিউ ইয়র্ক টাইমস্ বুক রিভিউ’ এই উপন্যাসের ভূয়সী প্রশংসা করেছিল। পরবর্তীকালে একাধিক লেখক ও গবেষক একে সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী উপন্যাসের তালিকায় উপরদিকে, বা সবার উপরেই স্থান দিয়েছেন। অবশেষে ২০১৩ সালে ‘ক্রাইম রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর মতে এই উপন্যাস অপরাধমূলক কাহিনির মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বলে বিবেচিত হয়েছে।
কেন?
এ-প্রশ্নের উত্তরটা এখানে লিখলে সেটা একটা প্রকাণ্ড স্পয়লার হয়ে যাবে। তাই সেই প্রসঙ্গে যাচ্ছি না। শুধু দুটি কথা বলে যাই।
প্রথমত, ক্রিস্টি নিজের আত্মজীবনীতে বলেছিলেন, এই গল্পের মূল ধারণাটি নাকি তিনি তাঁর ভগ্নীপতি জেমস ওয়াটসের কাছ থেকে পেয়েছিলেন। কিন্তু গবেষকেরা এই কাহিনির উৎসের সঙ্গে লর্ড মাউন্টব্যাটেনের সম্পর্কও খুঁজে পেয়েছেন— যিনি একদা ক্রিস্টিকে চিঠি লিখে প্রায় ওইরকমই একটা কিছু লেখার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তারই পাশাপাশি ক্রিস্টি এতে পোয়ারোকে নিয়ে লেখালেখির একটি বিশেষ ধারা অক্ষুণ্ণ রেখেছিলেন। নিজের প্রথম উপন্যাসের বীজটি তিনি পেয়েছিলেন ভারতে (মুসৌরিতে) ঘটে যাওয়া একটি সত্যিকারের হত্যাকাণ্ডে। দ্বিতীয় উপন্যাসের ভাবনাটি এসেছিল ফ্রান্সের একটি হত্যাকাণ্ড থেকে। তৃতীয় উপন্যাসের জন্য ক্রিস্টি ব্যবহার করেছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর কুখ্যাত ও অমীমাংসিত ‘চার্লস ব্রাভো হত্যারহস্য’ নিয়ে তাঁর নিজস্ব ভাবনাচিন্তাকে।
দ্বিতীয়ত, দৃষ্টিশক্তি থেকে বঞ্চিত পাঠকেরাও যাতে উল্লেখযোগ্য লেখার রসাস্বাদন থেকে বঞ্চিত না হন, সেজন্য যুক্তরাজ্যের ‘রয়্যাল ন্যাশনাল ইনস্টিট্যুট অফ ব্লাইন্ড’ তাদের ব্রেইল মাধ্যমে প্রকাশ করত। সেখানেই ‘বুকস্ ফর দ্য ব্লাইন্ড’ হিসেবে ঘোষিত কাজগুলোকে গ্রামোফোন রেকর্ডে স্থানান্তরিতও করা হত। ক্রিস্টির এই অদ্বিতীয় উপন্যাসটি এইভাবে রূপান্তরিত ও সংরক্ষিত প্রথম ও বিরলতম কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল। হয়তো এটাই বুঝিয়ে দেয়, উপন্যাসটি সমসাময়িক জগতে কতখানি আলোড়ন তুলেছিল।