জঙ্গল বলতে আমরা যেরকম বুঝি, এটা সেরকম নয়। হোটেলের সামনে কি আর ঘন জঙ্গল থাকতে পারে? কিছু নাম-জানা আর কিছু না-জানা প্রজাতির বড় বড় গাছ এবং তাদের আশ্রয়ে বেড়ে-ওঠা কিছু আগাছা, ঝোপঝাড়ের জঙ্গল তৈরি করেছে জায়গাটায়। সাজানো বাগান যেমন হয়, তেমনি সাজানো বন বল যেতে পারে এটা। প্রকৃতির সান্নিধ্যকে আরও নিবিড় করতেই সম্ভবত এইরূপ ব্যবস্থা। আমরা এর মধ্যে ঢুকতে যাচ্ছি, হঠাৎ দেখলাম, অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসছেন মিস্টার শংকর প্রসাদ। আমাদের দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন বলে মনে হল। তাড়াতাড়ি অজুহাত খাড়া করে বললেন, "আপনাদের কোনো অসুবিধে হচ্ছে না তো মিস্টার নন্দী? এত অন্ধকারে এই জঙ্গলে ঢুকছেন কেন আপনারা। অবশ্য ভয়ের তেমন কিছু নেই। বিষাক্ত কিছু নেই বলেই জানিয়েছে হোটেলিয়াররা। তবু সাবধানের মার নেই। আর সেজন্যই একটু কার্বলিক অ্যাসিড ছড়িয়ে এলাম ওখানে।"
আর তারপরেই ব্যস্তসমস্ত হয়ে রিসেপশনের দিকে এগোতে এগোতে বললেন, "তাড়াতাড়ি ঘুরে আসুন আপনারা। আমি টিফিনের ব্যবস্থা করছি।"
আমরা মূল রাস্তা ছেড়ে ডানদিকে ইতস্তত বনবাদাড়ে ঢুকে পড়লাম। অন্ধকার খুব। মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বেলে নিলাম। পায়ে পায়ে চলে এলাম একটা বড় পাইন গাছের নীচে। আর ঠিক তখনই পায়ে লাল পিঁপড়ের জ্বালাময় দংশন হজম করে বুঝতে পারলাম, ঠিক জায়গাতেই এসেছি। সম্ভবত এখানেই দাঁড়িয়ে ছিল সুবর্ণা। গাছটার ডানদিক বরাবর হাত পনেরো এগিয়েই মাটিতে পড়ে থাকতে দেখলাম সাদা রঙের গোল একটা টুপি।
পিঁপড়ের কামড় খাওয়া ব্যর্থ হল না ভেবে উৎফুল্ল হলাম আমি। তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে হাত বাড়িয়ে তুলে নিতে গেলাম টুপিটা। কিন্তু এ কী। এত ভারী লাগছে কেন এটা। মোবাইলের ফ্ল্যাশটা ভালো করে টুপির ওপর ফেলতেই ছ্যাঁত করে উঠল বুকের ভিতরটা। শরীরের ভিতর দিয়ে বয়ে গেল শীতল একটা অনুভূতি। দেখলাম...