ছোট গল্প বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সম্পদ। তার পরতে পরতে লুকিয়ে থাকে অজস্র মণিমুক্তো, কস্তুরী। রসিক পাঠক খোঁজ করেন তারই। মানুষ চেয়েছিল নিত্যদিনের বাস্তবতার সঙ্গে একটু অবাস্তব, একটু কল্পনা মিশিয়ে আনন্দ পেতে। সেই মানুষকে আনন্দদানের জন্যই তো গল্প রচনা।
‘ঘটনা প্রবাহ’ না ‘মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ’, কোনটা ছোটগল্পের উপজীব্য, এ নিয়ে বিতর্ক আছে বহু। আমরা ঐ বিতর্কে জড়াতে চাই না। আমরা জানি, মানুষের ভালো লাগার জন্য, মানুষকে নিয়েই গল্প। তাই মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, আশা-নিরাশা, প্রেম-অপ্রেমের কথায় এই সংকলনের গল্পগুলিতে প্রতিফলিত হয়েছে বার বার।
বেঁচে থাকার পথে হাজার সমস্যায় জর্জরিত মানুষের অসহায়তার ছবি আঁকলেও, লেখক জয়গান করেছেন জীবনের। যেমন এই সংকলনের প্রথম গল্পেই (“বৃষ্টি এলো বৃষ্টি”) লেখক যেভাবে আত্মহননের পথে অগ্রসর দুই যুবক-যুবতীকে গল্পের শেষে ফিরিয়ে এনেছেন জীবনের মূলস্রোতে তা যে কোন মানুষের কাছে অনুপ্রেরণার রসদ হতে পারে। আবার “জল” গল্পে পুকুরের জল নিয়ে শুরু হওয়া দুই ভাই-এর বিবাদ গল্পের পরিসমাপ্তিতে যেভাবে চোখের জলে শেষ হয়েছে তা আপামর পাঠককে নির্বাক করে দিতে বাধ্য। অন্যদিকে এক জমজমাট রহস্য গল্পও স্থান পেয়েছে এই সংকলনে। “কুসুম ফোটার আশে” গল্পে জমজমাট রহস্যের পাশাপাশি এক ক্ষয়িষ্ণু জমিদার পরিবারের সদস্যদের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ একই রকমভাবে উপভোগ্য।
লেখক গ্রামবাংলার মানুষ, তাঁর কর্মক্ষেত্রও মফস্বল এলাকা। তাই তাঁর লেখার পটভূমিতে ছড়িয়ে রয়েছে গ্রামবাংলার স্নিগ্ধ পরশ। যা পাঠকের কাছে নিঃসন্দেহে উপরি পাওনা।