প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পে প্রথমেই চোখে পড়ে বিষয়বৈচিত্র্য। পুনরাবৃত্তির ঝোঁক নেই। তাঁর গল্পে ঘটনায় নায়ক। তাই চমক তাঁর গল্পে নিশ্চিত প্রাপ্তি। খুবই সহজ সাধারণ দৈনন্দিন অথচ স্মার্ট তাঁর গল্পের শুরু। লেখনী সাবলীল, তাই গতি অপ্রতিরোধ্য। সংলাপের প্রয়োগে সেই গতি বাড়ে আর ন্যারেশনের প্রয়োগে গল্পের রাশ ধরে নিয়ন্ত্রণ করেন লেখক। স্ক্রিপ্টভিত্তিক লেখা, যে ঘরানার সফলতম রূপকার ছিলেন সত্যজিৎ রায়। ফলে পাঠক সম্পূর্ণ রস আস্বাদন করেন ঘটনার, বাঁকের, মোচড়ের, বিস্ময়ের। প্রসেনজিতের প্রখরতম মুন্সিয়ানা কিন্তু গল্পের শেষ দিকে। দুর্দান্ত শেষ সবকটি গল্পেরই। ক্লাইম্যাক্সে হাতের নখ খেয়ে ফেলা সাসপেন্সের শেষে সর্বত্রই প্রায় হাঁফছাড়া প্রশান্তি।
“দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে” গল্পে ভৌতিক প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে মনস্তাত্ত্বিক টানাপড়েনের যে গভীর জাল লেখক বুনেছেন তা এক কথায় মাইলফলক। সম্প্রতি পড়া কোনো গল্পে এইরকম রেঞ্জ দেখা গিয়েছে বলে মনে পড়ে না। উনিশ-কুড়ি পত্রিকায় প্রকাশিত “নিঠুর হে” আর “প্রেম আমার” গল্প দুটি যেমন হালকা টিনেজ প্রেমের আমেজ নিয়ে লেখা তেমনি “দীপান্বিতা” গল্পটি পাঠককে দাঁড় করায় বিশ্বাস-অবিশ্বাসের কঠিন কাঠগড়ায়। আজকের সকল টিনেজার যে এই গল্পগুলির সঙ্গে এক গভীর আত্মীয়তা অনুভব করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এই সংকলনের বাকি তিনটে গল্প ননিগোপাল নামক এক কাল্পনিক চরিত্রের অবলম্বনে কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা আলাদা পটভূমিকায়। “ননিগোপালের বই” গল্পে ভাঁড়ামো বর্জিত স্মিত হাস্যরসের পরিবেশন সৃষ্টি করেছে অনবদ্য এক সিরিওকমিক পরিস্থিতির। “ননিগোপালের গল্প” ও “ননিগোপালের সেলফোন” গল্পে বিস্ময়ান্ত চমক ও রহস্যময়তার অন্তর্লীন এক স্রোত-ধারা দক্ষ কথাশিল্পীর কুশলতায় যেভাবে বুনেছেন লেখক তা পাঠক হৃদয়কে শিহরিত করবে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
সর্বশেষে একটি কথা বলার, গল্পগুলি এতটায় আকর্ষণীয় ও রসোৎপাদক যে ভবিষ্যতে এর কোনটির বড় পর্দায় চিত্রনাট্যরূপ প্রকাশ পেলে আশ্চর্যের বিশেষ কিছু থাকবে না।