“গঙ্গা আমার মা, পদ্মা আমার মা...” গঙ্গা পদ্মা বিধৌত বিস্তীর্ণ ভূমিখণ্ডের অধিবাসী এক বিশাল জনগোষ্ঠীর মানুষ রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় দুটি ভিন্ন রাষ্ট্রে বসবাস করলেও তারা- “এক ভাষাতেই কাঁদে, হাসে/ এক ভাষাতেই গায়/ এক ভাষাতেই বুকের গাঙে/ প্রেমের নাও ভাসায়...!” তাদের শাপলা শালুক ভাসা পদ্মাদীঘির বুকে ঢেউ-এর শিরশিরানি এক, শিউলি ঝরা ভোরে ঘাসের আগায় ছোট্ট শিশির বিন্দুর টলমলানি এক, তুষারশুভ্র কাশফুলের কানে মৃদু-মন্দ অনিলের কানাকানি এক, অঘ্রাণের খেজুর গুড়ের মন মাতাল করা সুবাসে ‘ম-ম’ করা বাতাসের দোলদুলানি এক, দোয়েল-কোয়েল-মাছরাঙা-বেনেবৌ-ফিঙের কুজন এক। তাই বহিরঙ্গে পৃথক এপার-ওপার বাংলার মানুষের অন্তরকে সাহিত্যের মেলবন্ধনে বাঁধার জন্যেই আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস ‘দুই বাংলার গল্প’।
এই গল্প সংকলনে কিছু পশ্চিমবঙ্গের লেখকের ও কিছু বাংলাদেশের লেখকের মিলিয়ে মোট ১৪টি গল্প স্থান পেয়েছে। “রাস্তা”, “জনম জনম তব তরে কাঁদিব”, “অনেক পরীক্ষা পেরিয়ে” গল্পগুলো যেমন ভালোবাসার অকৃপণ রসে সিক্ত ঠিক তেমনই “পাগলা”, “বিতৃষ্ণিত”, “পেরজাপতি” গল্পগুলো মানবজীবনে প্রতিনিয়ত ঘটে চলা মনস্তাত্ত্বিক টানাপড়েনের এক অপূর্ব আখ্যান। আবার একটি কুকুরকে কেন্দ্র করে লেখা “শোধ” ও শালিক পাখির আখ্যান “উত্তরণ” পাঠক হৃদয় জয় করে নেবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
সর্বশেষে বলার, এই প্রচেষ্টা দুই বাংলার মানুষের সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের ইচ্ছে কুসুমকে প্রস্ফুটিত করার। যদি তা বিন্দুমাত্র সফল হয় তবে তাই হবে আমাদের বিরাট প্রাপ্তি।