আপিম চাষ থেকে দাস-ব্যবসা, জাহাজ ভাঙা থেকে মশলা ব্যবসায় টাকা করা, ইংরেজের পাটোয়ারি-দালালি করে দেশ বেচা থেকে গাঁয়ের কুলবধূকে বেশ্যা বানানোর মধ্যে দিয়ে গড়ে উঠেছে মোকাম কলিকাতা ও তার বাবুসমাজ। শাসকের প্রশ্রয়ে বড় বড় অপরাধ করে পার পেয়ে রাজা-উজির সাজা নব্যধনীরা একদিকে, অন্যদিকে অপরাধ জগত বলে দাগানো-ছাপানো পরিসরে ছাপোষাদের বাবু মহাজনদের দেখাদেখি লোভ-লালসা। এর মাঝে মানুষের জীবনের বড় সত্য, বড় ন্যায়-নৈতিকতা গুমরোতে থাকে।
এ কাহিনী সেই আঠারো-উনিশ শতকের সত্যানুসন্ধানের। জন্মসূত্রে কেউ অপরাধী হতে পারে, এই ভাবনাটাই উপনিবেশের শিখিয়ে দেওয়া সত্য। সে কথা এ কাহিনী মানে না। ঐতিহাসিক গোয়েন্দা প্রিয়নাথ, কাল্পনিক সত্যানুসন্ধানী ঋজুস্মান এবং তার মা মৈত্রেয়ীর যাত্রাপথে জালিয়াতি-খুন-জখম-ধর্ষণ থেকে রাজদ্রোহ-বিপ্লববাদ সবই জুড়ে যায়। মোকাম কলিকাতার সঙ্গে গ্রাম-মফস্বলের বাংলা চলতে থাকে উত্তর-পূর্বের রাজ্য আসাম ও মণিপুরের দিকে। সব অঞ্চলের ইতিহাসই জড়িয়ে গিয়েছে ব্রিটিশ তরবারীর ডগায় স্বাধীনতা বিসর্জন দিয়ে। এক সাম্রাজ্য যখন অন্যের স্বাধীনতা হরণ করে, পরাধীনদের অপরাধ চিহ্নিত করে, সেখানে কাকে বলা হবে অপরাধ? কাদের বলা হবে অপরাধী?
ঋজুস্মান, গোয়েন্দা হতে চেয়েছিল। তার সে সক্ষমতা আছে কী না, এর পরীক্ষা দিতে হয় তার মায়ের কাছে। নিজ পিতার মৃত্যু স্বাভাবিক মৃত্যু, না খুন? ব্যক্তিগত অন্বেষণ থেকে শুরু হয়ে বৃহৎ ঐতিহাসিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জুড়ে গিয়ে ঘটনার ঘনঘটায় এ কাহিনী দম ফেলার অবকাশ দেয় না। সত্যের একাধিক চেহারার মধ্যে এর টানাপোড়েন চোখের নিমেষ ফেলতে দেয় না।