“এক সন্ধ্যায় আমি সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম ছােট গল্প সংকলন। মােট পনেরােটি নানা স্বাদের গল্প নিয়ে গল্পকার সহজাত সাবলীল ভঙ্গীমায় এমনভাবে অবতীর্ণ হয়েছেন, যে পড়ার পরে মনেই হয়নি এই সংকলনটি শ্ৰী বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম দুই মলাট। ছােট গল্পের কোথায় শুরু আর কোথায় শেষ সে বিষয়ে লেখকের মুন্সীয়ানা চোখে পড়ার মতাে! একটি গল্প থেকে আর একটি গল্পে যেতে আমার নিজস্ব কিছু সময় দরকার পড়েছে বারবার, এমনই আবেশ ছড়িয়ে রয়েছে। নির্নিমেষে। জীবন আর যাপনের যে সমস্ত অণির্বান মুহূর্তগুলাে ছােটগল্পের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে দিগন্ত ছোঁয়ার, কি অসম্ভব কৌশলে সুব্রতবাবু তাদের অক্ষরবন্দী করেছেন , মুগ্ধ হয়েছি তা দেখে। আর একটি বিশয়ের উল্লেখ না করলেই নয় , তা হলাে জীবন সম্পর্কে একটা পজিটিভ ওয়েভ তার প্রায় প্রত্যেকটি গল্পকে সুবাসিত করেছে। প্লেটোনিক’ গল্পে যেমন অকৃত্রিম প্রেমের রেশ, ঠিক সেভাবেই আবার ‘অপেক্ষা’ গল্প চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে সময়ের যান্ত্রিক আনুষঙ্গ। ‘বিষধর’ কলুষিত বিবেককে ধুয়ে ফেলার চেষ্টা নিয়ে হাজির। মন তদন্ত’ গল্পে প্রৌঢ় অনিমেষ সান্যাল সরকারী পরিদর্শনে ছােটবেলার স্কুলে গিয়ে শেষ পর্যন্ত যখন স্বীকৃতি পান, হেডস্যার যখন তাঁর পায়ে হাত দিয়ে নমস্লকার করেন, সামাজিক মুল্যবােধটি যেন জ্বলজ্বল করে ওঠে। আবার ‘লাল স্করপিও’ গল্পে ভৌতিক আবহটি টানটান হয়ে উঠেছে নিপুনভাবে। বিজয়া দশমী’ লুপ্তপ্রায় জমিদারী ঐতিহ্যের সুবাসটুকে ধরে রেখেছে অসামান্য নিষ্ঠায়! গল্পগুলাে কখনােই গায়ে গায়ে হেলে পড়েনি। নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে ভিন্ন ভিন্ন পরিক্রমায় নতুনত্বের স্বাদ রেখেছে। আমার খুব ভাল লেগেছে শ্ৰী বন্দ্যোপাধ্যায়ের পনেরাে গল্পের এই অপূর্ব চয়ন। আশা করি, পাঠকদের খুব নিজস্ব হয়ে উঠবে এই দুই মলাটের আন্তরিক সৃষ্টিকর্মটি।