“আলোর মোহনায়”-এর প্রতিটি কবিতা কোন পৃথক কবিতা নয়- এটি একটি পূর্ণাঙ্গ উপ্ন্যাস যাকে কবিতার আকারে উপস্থাপিত করা হয়েছে।
রেশমী একটি পাহাড়ি নদী যার উৎপত্তি কোন এক নাম না জানা হিমবাহ থেকে। চলার শুরুতে সূর্যের সাথে তার মিতালী, তার প্রথম প্রেম। দিবারাত্রি তার জলরাশি খেলা করে চলেছে সূর্যের আলোর সাথে। কিন্তু এই মান-অভিমানের খেলা একসময় একঘেঁয়ে মনে হয় রেশমী নদীর কাছে। পাহাড় অতিক্রম করে পথে চলতে চলতে তার দেখা হয় অরণ্যের সাথে। পাহাড় ছাড়িয়ে বন-জঙ্গলে প্রবেশ করে রেশমী নদী। অরণ্যের নিস্তব্ধতায় সে মুগ্ধ, মোহিতও। অরণ্যের আদিমতায় রেশমীর জীবন থেকে হারিয়ে যেতে থাকে সূর্যের প্রেম। কিন্তু প্রেম কি সত্যি হারিয়ে যেতে পারে?
অরণ্যও ভালোবাসে রেশমী নদীকে। কিন্তু সে প্রেম বন্য। অরণ্যর বন্য প্রেম চিরকালের জন্য পেতে চায় রেশমীকে নিজের মতো করে। সারি সারি উপলরাশি আর কাঁকড় কণায় সে মজিয়ে দিতে চায় রেশমীর প্রবাহকে। অরণ্যর আদিম উদ্দাম প্রেমে দমবন্ধ হয়ে আসা রেশমী নদী চায় মুক্তি। মুক্তির ইচ্ছায় চঞ্চলা রেশমী নদী অরণ্যের বুকে দাবানল জ্বালিয়ে এগিয়ে চলে সমুদ্রের পানে – হয়তো কিছুটা সূর্যের ভালোবাসার টানে কিছুটা আত্মসংশোধনের অভীপ্সায়। কিন্তু সত্যি কি মুক্তি মেলে এত সহজে?
নদী, সূর্য আর অরণ্য– প্রকৃতির এই ভালোবাসার টানা-পড়েনকে এখানে লেখক ধরতে চেয়েছেন তিন মানব-মানবীর মধ্যে। কাব্যিক প্রেক্ষাপটে লেখক অঙ্ক কষেছেন তিন ভিন্ন মেরুতে বসবাসকারী মানুষের চাওয়া-পাওয়ার জটিল হিসেব।